সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর গুণ ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব

[একটি অনলাইন সাইটের ভাষ্যের সারসংক্ষেপ

অনুবাদ: এডমিন]

ভ্রান্ত শিয়াচক্র দাবি করে থাকে যে হযরত আলী মুরতজা (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) অন্যান্য সাহাবা কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বেশি অবদান রেখেছেন এবং যোদ্ধা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে, ফিক্বহী জ্ঞান ও কুর’আনের তাফসীর জ্ঞানসূত্রে তাঁর সাথে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এবং বিশেষ করে হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কোনো বিষয়ে না জানার সময়ে পরামর্শ করতেন। তাহলে তাঁদেরকে তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেয়া হয় কেন?

নিঃসন্দেহে মহান সাহাবী ‘আলী ইবনে আবি তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ছিলেন সবচেয়ে জ্ঞানী ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিদের একজন। তিনি তাঁর সাহসিকতার জন্য ছিলেন সুপরিচিত। তিনিই প্রথম যুবক যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন; তারপর হিজরতের আগে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সান্নিধ্যে ছিলেন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে মক্কা ত্যাগ করেন, তখন হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) মক্কায় থেকে গিয়েছিলেন এবং নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিছানায় শুয়েছিলেন (এভাবে ওই মুশরিকদের বোকা বানিয়েছিলেন যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে চেয়েছিল)। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসে তাঁর (আলী ক:-এর) ফযীলতের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি (সাহল রা.) বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খায়বার দিবসে বলতে শুনেছেন – 

(لأعطين الراية رجلا يفتح الله على يديه، فقاموا يرجون لذلك أيهم يعطى، فغدوا وكلهم يرجو أن يعطى، فقال: أين علي؟ فقيل يشتكي عينيه، فأمر فدعي له، فبصق في عينيه فبرأ مكانه حتى كأنه لم يكن به شيء) رواه البخاري 2942، ومسلم 2406.

অর্থ: “আমি পতাকাটি এমন একজনকে দেবো যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।” তাঁরা উঠে দাঁড়ান, কাকে পতাকা দেয়া হবে তা দেখার উদ্দেশ্যে। তাঁদের প্রত্যেকে আশা করেছিলেন যে তাঁকেই পতাকা দেয়া হবে। অতঃপর প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আলী কোথায়? তাঁকে বলা হয় তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন যে ‘আলী (ক.)-কে তাঁর কাছে যেনো ডাকা হয়। এরপর তিনি তাঁর চোখে থুথু ছিটিয়ে দিলেন এবং তিনি তৎক্ষণাৎ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেনো তাঁর চোখে কোনো সমস্যাই হয়নি। [আল-বুখারী কর্তৃক বর্ণিত, ২৯৪২; মুসলিম, ২৪০৬]

ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর যেমন অনেক গুণ (ফযায়েল) ও উন্নত বৈশিষ্ট্য (মানাকীব) ছিল, তেমনি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-এরও অনেক গুণ ও উন্নত বৈশিষ্ট্য ছিল। হযরত আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ফযীলতের মধ্যে তা রয়েছে যা হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: 

(خطب النبي صلى الله عليه وسلم فقال: إن الله خير عبدا بين الدنيا وبين ما عنده فاختار ما عند الله فبكى أبو بكر الصديق رضي الله عنه، فقلت في نفسي ما يبكي هذا الشيخ، إن يكن الله خير عبدا بين الدنيا وبين ما عنده فاختار ما عند الله، فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم هو العبد، وكان أبو بكر أعلمنا، قال: يا أبا بكر، لا تبك، إن أمن الناس علي في صحبته وماله أبو بكر، ولو كنت متخذا خليلا من أمتي لاتخذت أبا بكر، ولكن أخوة الإسلام ومودته لا يبقين في المسجد باب إلا سد إلا باب أبي بكر) رواه البخاري 466، ومسلم 2382.

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি খুতবা দেন এবং বলেন, “আল্লাহতায়ালা তাঁর একজন বান্দাকে এই দুনিয়া ও তাঁর কাছে যা আছে, এই দুইয়ের মধ্যে একটি পছন্দ দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে তাই বেছে নিয়েছেন।” এতদশ্রবণে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কাঁদতে লাগলেন, এবং আমি মনে মনে বললাম, “এই বৃদ্ধের কান্নার কারণ কী হতে পারে, যদি আল্লাহতায়ালা একজন বান্দাকে এই দুনিয়া এবং তাঁর কাছে যা আছে তার মধ্যে একটিকে বাছাই করতে দেন এবং তিনিও আল্লাহর কাছে যা আছে তা বেছে নেন?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বান্দা ছিলেন এবং হযরত আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ বকর, কেঁদো না। সাহচর্য ও অর্থের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হলো আবূ বকর।। আমি যদি আমার উম্মতের মধ্যে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রহণ করতাম তবে আমি আবূ বকরকেই বেছে নিতাম। কিন্তু ইসলামের ভ্রাতৃত্বই যথেষ্ট। আবূ বকরের (ঘরের) দরজা ছাড়া মসজিদে (প্রবেশের) কোনো (ঘরের) দরজাই আর খোলা রাখবে না।” [আল-বুখারী বর্ণিত, ৪৬৬; মুসলিম, ২৩৮২] {বঙ্গানুবাদকের নোট: এই দলিলে প্রমাণ হয় যে হযরতে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রূহানী জ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিলেন। কেননা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার মর্ম একমাত্র তিনিই বুঝতে পেরেছিলেন যে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহসা বেসাল শরীফ হতে চলেছে। অন্য কেউই এটা বুঝতে পারেননি। তিনি যে সবার চেয়ে আধ্যাত্মিকতায় অগ্রগামী ছিলেন তা এই দলিলে স্পষ্ট বোঝা যায়}

হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আরেকটি গুণ হলো এই যে, তিনি (মদীনায়) হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলেন, যেমনটি আল্লাহ বলেছেন:

إِلاَّ تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ ٱللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ ٱثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي ٱلْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَا فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلسُّفْلَىٰ وَكَلِمَةُ ٱللَّهِ هِيَ ٱلْعُلْيَا وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ.

অর্থ: যদি তোমরা ‘মাহবূব’কে সাহায্য না করো (তাতে কিছু এসে যায় না), তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন যখন কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁকে বাইরে তাশরীফ নিয়ে যেতে হয়েছে – শুধু দু’জন থেকে (একজন হলেন তিনি – অর্থাৎ, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অপরজন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) যখন তাঁরা উভয়ই গুহার মধ্যে ছিলেন, যখন আপন সঙ্গীকে ফরমাচ্ছিলেন, ‘দুঃখিত হয়ো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’ অতঃপর আল্লাহ তাঁর ওপর আপন প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন এবং তাঁকে এমন এক (ফেরেশতাদের) সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য করেছেন, যা তোমরা দেখো নি এবং তিনি কাফিরদের কথা নিচে নিক্ষেপ করেছেন; আল্লাহর কথাই সর্বোপরি; এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা তওবাহ, ৯/৪০; নূরুল ইরফান]

আর হযরত ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যাতুস্ সালাসিলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি বর্ণনা করেন:

(فأتيته فقلت أي الناس أحب إليك؟ قال عائشة، فقلت من الرجال فقال: أبوها، قلت: ثم من؟ قال: ثم عمر بن الخطاب، فعد رجالا) رواه البخاري 3662، ومسلم 2384.

অতঃপর আমি তাঁর (দ.) কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষদের মধ্যে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কে? তিনি উত্তরে বললেন, “আয়েশা।” আমি প্রশ্ন করলাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি জবাবে বললেন, “তার বাবা।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কে? তিনি উত্তরে বললেন, “তারপর ‘উমর ইবনুল খাত্তাব’ এবং তিনি আরো কয়েকজন পুরুষের কথা উল্লেখ করলেন। [আল-বুখারী বর্ণিত, ৩৬৬২; মুসলিম, ২৩৮৪]

হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আরেকটি গুণ হলো, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর যাহেরী/প্রকাশ্য হায়াতে জিন্দেগীর শেষভাগে তাঁকে তাঁর (দ.) পরিবর্তে নামাযের ইমামতি করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর শেষ অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তিনি সেসব ব্যক্তিকে তিরস্কার করেছিলেন যারা এতে আপত্তি জানিয়েছিল; প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 

(مروا أبا بكر فليصل بالناس) رواه البخاري 683، ومسلم 418.

“আবূ বকরকে বলো সে যেনো মানুষদের নামাযের ইমামতি করে।” [আল-বুখারী বর্ণিত, ৬৮৩; মুসলিম ৪১৮]

হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী পাক (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্ব-হযরত আবূ বকর, উমর ও উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-এর সাথে উহুদের পাহাড়ে আরোহণ করেন এবং তাঁদের পায়ের নিচে তা কাঁপতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: 

(اثبت أحد فإنما عليك نبي وصديق وشهيدان) رواه البخاري 3675، وغير ذلك.

“হে উহুদ, দৃঢ় হও, কেননা তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দুইজন শহীদ ছাড়া আর কেউ নেই।” [আল-বুখারী বর্ণিত, ৩৬৭৫; এবং অন্যান্যরাও]

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যাপারেও তাঁর অনেক গুণ ও উন্নত বৈশিষ্ট্য ছিল যা বহু বর্ণনায় প্রমাণিত। যেমন – হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 

(بينا أنا نائم رأيت الناس يعرضون علي وعليهم قمص، منها ما يبلغ الثدي ومنها ما دون ذلك، وعرض علي عمر بن الخطاب وعليه قميص يجره، قالوا فما أولت ذلك يا رسول الله قال الدين) رواه البخاري 23، ومسلم 2390.

“আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম মানুষদেরকে আমার সামনে প্রদর্শন করানো হচ্ছে এবং তারা কামিস্/জামা পরা অবস্থায় ছিল। কিছু জামা বুক পর্যন্ত নেমে এসেছে, আবার কিছু তার চেয়েও খাটো। ‘উমর ইবনুল খাত্তাবকে আমার সামনে দেখানো হয়েছিল এবং সে একটি জামা পরেছিল যা মাটিতে টানতে হচ্ছিল।” সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আরজ করেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি এর ব্যাখ্যা কীভাবে করেন? তিনি উত্তরে বলেন, “ধর্মপরায়ণতা/ধার্মিকতা।” [আল-বুখারী বর্ণিত, ২৩; মুসলিম, ২৩৯০]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

(بينا أنا نائم أتيت بقدح لبن فشربت حتى إني لأرى الري يخرج في أظفاري، ثم أعطيت فضلي عمر بن الخطاب، قالوا فما أولته يا رسول الله قال العلم) رواه البخاري 82، ومسلم 2391.

“আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখন আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ আনা হলো এবং আমি তা পান করলাম যতোক্ষণ না আমি দেখতে পেলাম যে আমার নখ থেকে ভেজা বেরিয়ে আসছে। অতঃপর বাকিটুকু উমর ইবনুল খাত্তাবকে দিয়ে দিলাম।” সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আপনি এর ব্যাখ্যা কীভাবে করেন? তিনি উত্তরে বললেন, “(এটা দুনিয়া-আখিরাতের যাবতীয়) জ্ঞান।” [আল-বুখারী বর্ণিত, ৮২; মুসলিম, ২৩৯১]

আর মা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:

(قد كان في الأمم قبلكم محدثون، فإن يكن في أمتي منهم أحد فإن عمر بن الخطاب منهم) رواه مسلم 2398.

“তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে মুহাদ্দাসূন (ঐশী প্রত্যাদিষ্ট ব্যক্তিবর্গ) ছিল; এবং আমার উম্মতের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, তাহলে উমর ইবনুল খাত্তাব তাদের একজন। [মুসলিম, ২৩৯৮]

এছাড়াও অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে যা সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-বৃন্দের ফযীলতকে নির্দেশ করে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন তা এমন একটি বিষয় যা অর্থবহ এবং শরী‘আতে প্রমাণিত। এটা মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয় নয়, বরং এর ফায়সালা শরী‘আতের প্রতি আরোপ করা উচিত, ঠিক যেমনটি আল্লাহ ঘোষণা করেছেন:

وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُ مَا كَانَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ سُبْحَانَ ٱللَّهِ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ.

অর্থ: এবং আপনার রব/প্রভু সৃষ্টি করেন যা চান এবং পছন্দ করেন। তাদের কোনো ক্ষমতা নেই (কোনো বিষয়েই)। পবিত্রতা আল্লাহরই এবং তিনি তাদের শির্ক থেকে বহু ঊর্ধ্বে। [সূরাহ কাসাস, ২৮/৬৮; নূরুল ইরফান]

তাই আমাদের উচিৎ সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-বৃন্দের মর্যাদা জানার জন্য শরয়ী দলীলের শরণাপন্ন হওয়া। হযরত ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, 

“كنا نخير بين الناس في زمن النبي صلى الله عليه وسلم فنخير أبا بكر ثم عمر بن الخطاب ثم عثمان بن عفان رضي الله عنهم” رواه البخاري 3655، وفي رواية قال: “كنا في زمن النبي صلى الله عليه وسلم لا نعدل بأبي بكر أحدا ثم عمر ثم عثمان ثم نترك أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم لا نفاضل بينهم” البخاري 3697.

“আমরা মানুষদের মধ্যে তুলনা করতাম যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ে কে উত্তম ছিলেন। আমরা হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে সর্বোত্তম, তারপর হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতাম” [আল-বুখারী, ৩৬৫৫]। অন্য একটি বর্ণনায় তিনি আরো বলেন: “নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময় আমরা হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সমকক্ষ কাউকে মনে করতাম না। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবা (রা.)-দের মধ্যকার ফযীলতের তুলনা ছেড়ে দেই (এবং তাঁদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করিনি)।” [আল-বুখারী, ৩৬৯৭]

এটা সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সাক্ষ্য, যা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত এ মর্মে যে, সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হতে প্রথমতঃ হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু , তারপর হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শ্রেষ্ঠ ছিলেন।

এবার আসুন হযরত ‘আলী ইবনে আবি তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর দিকে ফিরে তাকাই এবং তিনি কী বলেছেন তা দেখি। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (যিনি ছিলেন আলী ইবনু আবি তালিবের পুত্র) থেকে বর্ণিত হয়েছে: 

(قلت لأبي أي الناس خير بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: أبو بكر، قلت ثم من؟ قال: ثم عمر، وخشيت أن يقول عثمان، قلت ثم أنت؟ قال: ما أنا إلا رجل من المسلمين) رواه البخاري 3671.

“আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পর মানুষের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? তিনি উত্তরে বললেন, ‘আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।’ আমি প্রশ্ন করলাম, ‘তারপর কে?’ তিনি জবাবে বললেন, ‘তারপর ‘উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।’ আমি ভয় পেয়েছিলাম যে তিনি ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে আপনি কী?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন মাত্র’। [আল-বুখারী, ৩৬৭১]

বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) বলেছেন:

(لا أوتي بأحد يفضلني على أبي بكر وعمر إلا ضربته حد المفتري).

“আমার কাছে এমন কাউকে যদি আনা হয়, যে আমাকে সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে, তবে আমি তাকে অপবাদের দায়ে প্রহারের শাস্তি (হাদ্দ) দেবো।”

ইবনে তাইমিয়া বলেন: বর্ণিত হয়েছে যে তিনি কুফার মিম্বরে খুতবা দিতেন এবং বলতেন যে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে এই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। এটা তাঁর কাছ থেকে আশিটিরও বেশি ইসনাদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে এবং এগুলো আল-বুখারী এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। তাই পূর্ববর্তী শিয়াবর্গ সবাই একমত পোষণ করতেন যে সর্ব-হযরত আবূ বকর এবং উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-ই শ্রেষ্ঠ ছিলেন, ঠিক যেমনটি একাধিক শিয়া আলেম কর্তৃক উল্লেখ করা হয়েছে। [মানহাজ আস্ সুন্নাহ, ১/৩০৮]

وعن أبي جحيفة: “أن عليا رضي الله عنه صعد المنبر، فحمد الله تعالى وأثنى عليه وصلى على النبي صلى الله عليه وسلم وقال: خير هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر، والثاني عمر رضي الله عنه، وقال يجعل الله تعالى الخير حيث أحب” رواه الإمام أحمد في مسنده 839، وقال الشيخ شعيب الأرناؤوط: ” إسناده قوي “.

আবূ জুহাইফাহ থেকে বর্ণিত যে, ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করেন, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন; অতঃপর তিনি বলেন: “নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পর এই উম্মতের মাঝে উত্তম হলেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); দ্বিতীয় উত্তম ব্যক্তি হলেন হযরত ‘উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এবং তারপর আল্লাহ যাঁর মঙ্গল চান তিনিই উত্তম। [ইমাম আহমাদ হাম্বল (রহ.) কৃত মুসনাদ, ৮৩৯; শায়খ শুয়াইব আল-আরনাউত (রহ.) বলেছেন, এর সনদ কাওয়ী/শক্তিশালী]

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই হাদীসগুলো এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-বৃন্দের এতদসংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সবই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিশ্বাসের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, যাঁদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পর এই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এবং তারপর হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। আল্লাহ তায়ালা সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) সর্বদা হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর সাথে পরামর্শ করতেন এবং তাঁদের কোনো জ্ঞান ছিল না মর্মে এমন ধারণার বিষয়ে বলবো, এটা কোনো আসর তথা সাহাবী (রা.)-বৃন্দের বাণী বা বক্তব্যে প্রমাণিত নয়। বরং এটা প্রমাণিত যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁর চূড়ান্ত অসুস্থতায় পীড়িত ছিলেন তখন এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেনো হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মানুষদের নামাযের ইমামতি করেন। নামাযের হুকুম সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দায়িত্ব অর্পণ করতেন না। আর এটা প্রমাণিত যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্জের পূর্বে হযরত আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে হজ্জের ইমামতি করার জন্যেও নিযুক্ত করেছিলেন। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের পদে নিযুক্ত করতেন না, যদি না তিনি সাহাবা (রা.)-বৃন্দের মাঝে (হজ্জ) সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী হতেন। প্রকৃতপক্ষে এও বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে কয়েকটি বিষয়ে কিছু হাদীস শিখেছিলেন।

বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আসমা বিনতে আল-হাকাম আল-ফাযারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: 

(سمعت عليا يقول: إني كنت رجلا إذا سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم حديثا نفعني الله منه بما شاء أن ينفعني به، وإذا حدثني رجل من أصحابه استحلفته فإذا حلف لي صدقته، وإنه حدثني أبو بكر وصدق أبو بكر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ما من رجل يذنب ذنبا ثم يقوم فيتطهر ثم يصلي ثم يستغفر الله إلا غفر الله له، ثم قرأ هذه الآية ـ ((وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوۤاْ أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسْتَغْفَرُواْ لِذُنُوبِهِمْ)) ـ إلى آخر الآية) رواه الترمذي 406. 

আমি হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-কে বলতে শুনেছি: ‘আমি এমন একজন ব্যক্তি ছিলাম যে, যদি আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে একটি হাদীছ শুনতাম, তবে এর দ্বারা আল্লাহ আমাকে যতোটা উপকার করতে চেয়েছিলেন ততোটা আমাকে উপকৃত করেছেন। যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি আমার কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করতেন, তাহলে আমি তাঁকে সেটার সত্যতার ব্যাপারে কসম করতে বলতাম; যদি তিনি শপথ করতেন তাহলেই আমি তাঁকে বিশ্বাস করতাম।’ হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) আমাকে (মানে হযরত আসমা বিনতে ফাযারী-কে) বলেন: ’হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, এবং হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সত্য বলেছেন এ মর্মে যে, “আমি (হযরত আবূ বকর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘এমন কোনো লোক নেই, যে পাপ করে আর তারপর (রাতে) উঠে নিজেকে পবিত্র করে এবং (নামাযে) প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিম্নের) এই আয়াতটি পাঠ করেন – এবং ওই সব লোক, যখন তারা কোনো অশ্লীলতা কিংবা স্বীয় আত্মার প্রতি যুলম করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে স্বীয় গুনাহর ক্ষমা প্রার্থনা করে (সূরাহ আলে ইমরান, ৩:১৩৫; নূরুল ইরফান)।” [আত-তিরমিযী, ৪০৬; এর মান – হাসান]

وروى الترمذي (3682) عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ الْحَقَّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ ). 

অর্থ: ইমাম আত্ তিরমিযী (৩৬৮২) হযরত ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আল্লাহ উমরের জিহ্বায় এবং তাঁর অন্তরে সত্য স্থাপন করেছেন।” [হাদীসের মান – সহীহ]

মোদ্দা কথা হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা-বিশ্বাস, যার ওপর তাঁরা (সুন্নী আলেম-উলামা) সর্বসম্মতিক্রমে একমত, তা হলো নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর এই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। আল্লাহতায়ালা তাঁদের উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

ইবনে তাইমিয়া বলেন: 

لم يقل أحد من علماء المسلمين المعتبرين: إن عليا أعلم وأفقه من أبي بكر وعمر بل ولا من أبي بكر وحده، ومدعي الإجماع على ذلك من أجهل الناس وأكذبهم، بل ذكر غير واحد من العلماء إجماع العلماء على أن أبا بكر الصديق أعلم من علي، منهم الإمام منصور بن عبد الجبار السمعاني المروذي، أحد أئمة السنة من أصحاب الشافعي ذكر في كتابه: “تقويم الأدلة على الإمام” إجماع علماء السنة على أن أبا بكر أعلم من علي، وما علمت أحدا من الأئمة المشهورين ينازع في ذلك، وكيف وأبو بكر الصديق كان بحضرة النبي صلى الله عليه وسلم يفتي ويأمر وينهي ويقضي ويخطب كما كان يفعل ذلك إذا خرج هو وأبو بكر يدعو الناس إلى الإسلام ولما هاجرا جميعا ويوم حنين وغير ذلك من المشاهد والنبي صلى الله عليه وسلم ساكت يقره على ذلك ويرضى بما يقول ولم تكن هذه المرتبة لغيره. وكان النبي صلى الله عليه وسلم في مشاورته لأهل العلم والفقه والرأي من أصحابه: يقدم في الشورى أبا بكر وعمر فهما اللذان يتقدمان في الكلام والعلم بحضرة الرسول عليه السلام على سائر أصحابه، مثل قصة مشاورته في أسرى بدر، فأول من تكلم في ذلك أبو بكر وعمر، وكذلك غير ذلك…. وفي صحيح مسلم أن أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم كانوا معه في سفر فقال: (إن يطع القوم أبا بكر وعمر يرشدوا)، وقد ثبت عن ابن عباس: أنه كان يفتي من كتاب الله، فإن لم يجد فبما سنه رسول الله صلى الله عليه وسلم، فإن لم يجد أفتى بقول أبي بكر وعمر، ولم يكن يفعل ذلك بعثمان وعلي، وابن عباس حبر الأمة وأعلم الصحابة وأفقههم في زمانه، وهو يفتي بقول أبي بكر وعمر مقدما لقولهما على قول غيرهما من الصحابة. وقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: ” اللهم فقهه في الدين وعلمه التأويل. مجموع الفتاوى 4 / 398.

অর্থ: “সম্মানিত মুসলিম উলামা/পণ্ডিতদের মধ্যে কেউই বলেননি যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন বা ইসলাম সম্পর্কে বেশি বুঝতেন; এমনকি হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর একার চেয়েও বেশি বুঝতেন। যারা দাবি করে যে এই ভ্রান্ত ধারণার ওপর (উলামাবৃন্দের) ঐকমত্য আছে তারাই সবচেয়ে অজ্ঞ এবং সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। বরং একাধিক আলেম বলেছেন যে পণ্ডিতদের ঐক্যমত রয়েছে এ মর্মে যে হযরত আবূ বকর আস-সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন; যেমন – ইমাম মনসূর ইবনে আবদুল জাব্বার আল-সাম’আনী আল-মারওয়াযী (রহ.) যিনি ইমাম আশ-শাফাঈ (রহ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় সুন্নী আলেম ছিলেন, তিনি তাঁর ‘তাক্বউয়ীমুল-আদিল্লাহ ‘আলাল-ইমাম’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে সুন্নী পণ্ডিতদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল এ মর্মে যে হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন। আমি বিখ্যাত ইমামদের মধ্যে এমন কাউকে চিনি না যিনি এই বিষয়ে মতভেদ করেছেন। এর অন্যথা কেমন করে হতে পারে যখন হযরত আবূ বকর আস্ সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শরঈ হুকুম-আহকাম ও নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন, ফায়সালা দিতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে খুতবা দিতেন, যেমনটি তিনি করতেন যখনই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মানুষদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে বের হতেন এবং যখন তাঁরা একসাথে হিজরত করেছিলেন এবং এর পাশাপাশি হুনাইনের যুদ্ধের দিনে এবং অন্যান্য উপলক্ষে; যখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব থাকতেন এবং এ সব অনুমোদন করতেন। হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর মতো অন্য কেউই এই ধরনের মর্যাদা লাভ করেননি। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁর সাহাবা (রা.)-দের মধ্যে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করতেন, তখন তিনি প্রথমে সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে পরামর্শ করতেন, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে তাঁর বাকি সাহাবা (রা.)-দের সামনে তাঁরাই প্রথমে ইসলামী বিষয়াদি সম্পর্কে কথা বলতেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদর জ্বিহাদের বন্দীদের সম্পর্কে সাহাবা (রা.)-বৃন্দের সাথে পরামর্শ করেছিলেন, তখন প্রথম যাঁরা এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন তাঁরা হলেন সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা), এবং এটা অন্যান্য উপলক্ষেও ঘটেছে… সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, একবার নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবা (রা.)-বৃন্দ তাঁর সাথে সফরে ছিলেন এবং তিনি বলেন: ‘লোকেরা যদি আবূ বকর ও উমরের আনুগত্য করে তবে তারা সৎপথে পরিচালিত হবে।’ আর হযরত ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিতেন এবং (তাতে সমর্থনসূচক) কিছু না পেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতের দিকে তাকাতেন; এরপরও যদি তিনি (তাতে) কিছু না পেতেন তবে তিনি সর্ব-হযরত আবূ বকর এবং উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ফতোয়াগুলি থেকে ফায়সালা নিতেন; এরপরও যদি তিনি (তাতে) কিছু না পেতেন তবে তিনি সর্ব-হযরত উসমান এবং আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ফতোয়াগুলি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন – আর হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন হাবর আল-উম্মাহ (উম্মাহর পণ্ডিত) এবং তিনি তাঁর সময়ে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মাঝে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী আলেম; আর তিনি সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে পরামর্শ করতেন এবং সাহাবা (রা.)-দের মধ্যে অন্য কারো কথার উপর তাঁদের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিতেন। অধিকন্তু এটা প্রমাণিত যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য দোয়া করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “হে আল্লাহ, তাকে ইসলামী দ্বীন বোঝার এবং (কুরআনের) সঠিক তাফসীর/ব্যাখ্যা শিক্ষা দিন।” [মজমূআ আল-ফাতাওয়া, ৪/৩৯৮]

আরো দেখুন –

(ক) আল-ফাসল ফীল-মিলাল ওয়ান্ নিহাল, ৪/২১২;

(খ) বাল্ দ্বলালাহ, ২৫২ পৃষ্ঠা;

(গ) আশ্ শী’আতুল ইমা’মিয়্যাতুন্ ইসনা আশারিয়্যাহ।

*সমাপ্ত*

আরো রেফারেন্স লিঙ্ক:

https://sufi-hearth.blogspot.com/2023/05/blog-post.html

Leave a comment